আল হাছিব তাপাদার:: জকিগঞ্জে মসজিদের ইমামের খাটের নীচ থেকে হাত পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে ইমামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটে রবিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকার হাজারীচক পশ্চিম মহল্লা নতুন পাঞ্জেগানা জামে মসজিদে।
ঐ রাতে মেয়েটির বাবা হাজারীচক গ্রামের জুবের আহমদ বাদী হয়ে বারঠাকুরী ইউপির দৌলতপুর গ্রামের কুতুব উদ্দীনের ছেলে ইমাম হাসান আহমদ (২৫)কে আসামী করে শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
সোমবার পুলিশ আটক ইমামকে জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
জকিগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, কথিত ইমাম জকিগঞ্জ থানা পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে স্বীকার করে জানিয়েছে, স্কুল ছুটির পর মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায় তার রুমে। পরে শরবতের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে গেলে সে একবার ধর্ষন করে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানাগেছে, কলাকুটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী রবিবার স্কুল ছুটির পর থেকে নিখোঁজ ছিলো। এ ঘটনায় এলাকায় মাইকিং করা হয় এবং আশপাশ এলাকার ডোবা, পুকুর ও সম্ভাব্য স্থানে স্কুল ছাত্রীকে খোঁজতে থাকেন পরিবারের লোকজন। সন্ধ্যা পরে এলাকার লোকজন সন্দেহবশত গ্রামের পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমামের কক্ষে তল্লাশী চালালে ইমামের খাটের নিচে হাত পা ও মুখ বাঁধা অচেতন অবস্থায় স্কুল ছাত্রীকে পান। এ সময় মসজিদের ইমামকে স্থানীয় জনতা আটক করে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়।
পরে ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ডেকে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
এলাকাবাসী আরও জানান, পাষন্ড ইমাম স্কুল ছাত্রীটিকে মসজিদের হুজরায় কক্ষবদ্ধ করে আসর ও মাগরিবের নামাজের ইমামতিও করেছে।
কলাকুটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমিনা বেগম এ ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে বলেন, স্কুল ছুটির পর একটি মেয়ে বাড়ীতে যাওয়ার পথে একজন ইমাম হিসেবে মেয়েটির সাথে এমন আচরণ করবেন তা মেনে নেয়া যায়না। এ ঘটনার জন্য ইমামের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে এ শাস্তির ভয়াবহতা দেখে লম্পটরা শিক্ষা নেয় এবং আর কোন মেয়ে এমন ঘটনার শিকার না হয়। স্কুল ছাত্রীটি এখন সুস্থ্য আছে। তার পরিবারের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী জানান, ইমামেরও কক্ষ থেকে ছাত্রীটিকে উদ্ধারের পর স্থানীয়দের ধারণা ছিলো ইমাম ছাত্রীটিকে নির্যাতন করেছে। পরে জানাগেছে আসলেই এমনটাই ঘটেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমাদের পক্ষ থেকে ছাত্রীর পরিবারকে যতটুকু সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন আমরা দেব। কথিত এই ইমামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হওলাদার জানান, আটক ইমাম জানিয়েছে, স্কুল ছুটির পর মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায় তার রুমে। পরে শরবতের সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে গেলে সে ধর্ষণ করে। স্কুল ছাত্রীটিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেও জানিয়েছে, মসজিদের ইমাম তাকে ডেকে নিয়ে শরবত খাওয়াইছে। এরপরের ঘটনা তার জানা নেই।
Leave a Reply